ভ্যাবলা আর ভ্যালেন্তিনা।
নিচের ছবিতে।
চাকরি নামক যে ভুলভুলাইয়াগুলিতে আটকা পড়ে থাকতে থাকতে দিনাতিপাত চলে তার সাম্প্রতিকতম কিস্তিটির পার্কিং লটে বাসা বেঁধেছে এই জুড়ি। দিল্লির আশেপাশে ওখলা আর সুলতানপুরের দুটো বড়সড় পাখিরালয়ের সৌজন্যে, সম্ভবতঃ সাইবেরিয়া টাইবেরিয়া থেকে (সম্যক জানা নেই, ধরে নিয়েছি, বিদেশিদের ওপর আমাদের দুর্বলতা সর্বজনবিদিত) উড়ে আসা অজস্র জুড়িদারদের সাথে মতে না পোষানোয়, একশো অথবা হাজার পেরোনো এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সওয়ালা ধুলোধোঁয়াসিসাভরা শহরের কেন্দ্রে, বছরের শুরু থেকে বসবাস এই দুই ইন্ট্রোভার্ট কুঁড়ের হদ্দ দম্পতির। গাড়ির হর্ন শুনেও পার্কিং ছাড়েন না এরা, নিজের পা'এর ওপর দাঁড়ানোও বিলকুল না পসন্দ ভ্যালেন্তিনা'র তা ছবিতেই বেশ বোঝা যাচ্ছে।
ওরা পরিযায়ী। আমার মতো শহর বদলেছে বারবার, সম্ভবতঃ ফিরে যাবার ইচ্ছেটুকুও ভুলেছে আমারই মতন।
প্রযুক্তিবিদ্যার যে খুড়োর কলটিতে আমি জীবনের চার বচ্ছর নষ্ট করি, তার হোস্টেল-এ আমার এক বছর উপরের ব্যাচে 'কাকা' নামক একটি বরাহশাবক বসবাস করতো, ভালোনাম সম্ভবতঃ দীপেশ-টিপেশ কিছু একটা ছিলো ঠিকমতন মনে পড়ে না, তবে ছেলেবেলার হরলিক্স-এর কাঁচের বোতলের পাছা'র মতো মোটা কাঁচের একটা চশমা পরতো বোধহয়। দু-থাপ্পড় মারলে যে উল্টে পড়তে পারতো, পরিস্থিতির দোয়া'য় তার অত্যাচার সহ্য করতে গিয়ে নিজের ওপরেই ঘেন্না আসতো রীতিমতো। অথচ ঠিক পরের বছরেই, নতুন বাচ্চারা এসে পড়ার পর, তাদের নিয়ে মজা করতে খুব একটা বাধেনি আমার। এই যে নিজের হাতে গড়া আদর্শ-টাদর্শ বা শুভ-বোধগুলো থেকে যোজনখানেক সরে আসা সামান্য ইগো মালিশের সৌজন্যে - এতটা সরে আসা নিজেকে পরিযায়ী তো তখনই বলা যেত, তাই না? তাহলে আজকে দিল্লি গুরগাঁওতে রাতের আঁধারে যে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ধর্মান্ধ হায়নার দল আশেপাশের বস্তিতে বাঙালি শাঁখা-সিঁদুরওয়ালীদের সামান্য চমকে আর বাঙালি মুসলিমদের মোটামুটি পিটিয়ে বা পেটানোর ভয় দেখিয়ে এবং খেদিয়ে আনন্দ পাচ্ছে, তারাও সামান্য পরিযায়ী'ই বটে, এর বেশি অপরাধ বোধহয় তাদের নেই।
সিপিএম ইংরেজি তুলে দিয়েছিলো বলে জ্যোতিবসুর-ওপর-চিরখাপ্পা কংগ্রেসি জেলখাটা স্বাধীনতা-সংগ্রামী-মায়ের কনিষ্ঠা-দুহিতা আমার মা গজগজ করতো ছোটবেলায় দেখেছি। তৃণমূল সম্ভবতঃ পড়াশোনাই তুলে দিয়েছে অনেককাল হলো। বিজেপি এলে নকশালদের কাঁথায় আগুন তুলে দেবে এই ভয় দেখিয়ে নকশালদের মনুমার্ক্সবাদী সাবঅল্টারন-মা দিব্যি একাধারে পরিযায়ী ম্যানুফ্যাকচার ও পরিযায়ী ত্রাণ করে চলেছেন তা'ও বছর চোদ্দ হলো। এ হেন বাংলায় সুভাষ বোসের পর নিজের হাতে বন্দুক-পেটো-ধরা বাঙালিদের অন্যতম ভাটপাড়ার অর্জুন সিংকেও দলবদলের ধুমে যাওয়া আসা স্রোতে ভাসা পরিযায়ী বলে কেমন করুণা হয় আজকাল।
আত্মীয় অনেকটা দূরে সরে গেলে পরিযায়ী বলা চলে তাকে? বিবেকা'মুন্দন'-ভক্ত নন-বায়োলজিক্যাল বাপের বাপ দো-লান্ড ট্রাম্পকে পিতেমো বানানো ভক্তরা আজ যেভাবে একসময়ের বয়কট-ফ্রেন্ডলি দেশের দিকে বদলার জুটি বানানোর জন্য মুখিয়ে আছে, তাতে কিছুদিনের মধ্যে তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে আরবান নকশাল লুকিয়ে ছিলো বলে জিনপিং ও বিবেক ঘটক অগ্নিহোত্রী'র জয়েন্ট প্রেস ব্রিফিং এলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। ওদিক থেকে চক্ষুলজ্জার খাতিরে সামান্য সরতে চাইলেও হাতে থাকবে নেহেরু'র বিদেশনীতির সুফল রাশিয়া অথবা কমিউনিস্ট লুলা দ্য সিলভা'র ব্রাজিল। স্বপ্নের মধ্যে ভক্তদের গলায় 'অচিন্ত্য'-নীয় ভাষায় কাজী সব্যসাচী'র ভারিক্কি কন্ঠে অভিমান শুনতে পাচ্ছি আজকাল:
"হ্যাঁ, 'উনিজি'ও 'পরিযায়ী'
কেউ উৎখাত ভিটেমাটি থেকে
কেউ উৎখাত 'সঙ্ঘ' আদর্শ থেকে"