Saturday, December 7, 2019

বাজে গল্প ৪

অমিত্রসূদন বাবু বেডে শুয়েই হাঁসফাঁস করছিলেন। ডাক্তার অম্বুজাক্ষ তলাপাত্রের দুপুরের রাউন্ডের অপেক্ষাতে উৎসুক। ডাক্তারবাবু বেডের পাশে এসে দাঁড়াতেই জিজ্ঞাসা করলেন সেই প্রশ্নটা যেটা ভদ্রতা ও ভয় এর বশে করে উঠতে করতে পারেননি ভর্তি হওয়ার দিন থেকে। ডাক্তারবাবু বড়জোর একমিনিট সময় খরচ করেন রোগীপিছু রাউন্ডের সময়, বড় কোন সমস্যা না থাকলে, তাই ভনিতা কম রাখাই ভালো।

"কত সময় আছে আমার হাতে আর ডাক্তার তলাপাত্র"?

অম্বুজবাবু সকালের রিপোর্টের ওপর গম্ভীর মুখে দ্রুত চোখ বোলালেন, হেড নার্স মনসালতা মাইতিকে ডেকে খুব মৃদু স্বরে কিছু একটা দু-এক-কথা'র উপদেশ দিলেন।

"বললেন না যে ডাক্তারবাবু?" অমিত্র অস্থির।

দুপাশে অল্প একটু ঘাড় নেড়ে অম্বুজ বললেন "দশ"!

অমিত্র বিহ্বল হয়ে পড়লেন। "'দশ'??!! ছেলেকে নিউ জার্সি থেকে ডেকে পাঠাই তাহলে ডাক্তারবাবু?? ফিরিঙ্গি বে করেছে বলে মুখ দেখব না বলেছিলাম!" 

তারপরে বাস্তববুদ্ধি ফিরলে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "ইয়ে, 'দশ' কি ডাক্তারবাবু? মাস? বছর তো নিশ্চই নয়? গড়পারের বাড়িটা বেচে দেব ভাবছিলাম, দাম পাচ্ছিলাম না, ভাবলাম বছর খানেক ধরে রাখি, অদ্দিন বোধহয়?? য়্যা??"

ডাক্তারের কালো হয়ে আসা মুখের দিকে তাকিয়ে আবার ভেবলে গেলেন অমিত্রসূদন। "তাহলে কি 'দিন' ডাক্তারবাবু? গিন্নি আজ মেয়ের বাড়ি গেছে মেয়ের ননদের আইবুড়ো ভাত-এ, বলে গেছে একটা দিন যেন না জ্বালিয়ে যেন ওর হাড়ে বাতাস লাগাই! একটা ফোন করি গিন্নিকে?"

কেবিনজোড়া নৈঃশব্দ্য। এবার নিয়তির হাতছানি ধরতে পারছেন অমিত্র। ফ্যাসফেসে গলায় শুধু জিজ্ঞাসা করতে পারলেন, "তবে কি ঘন্টা? য়্যা? ও মনসাদিদি, আজ রাতে আর ওই জ্যালজেলে স্যুপ নয়, একটু পেঁয়াজ রসুন দে' মাংস খাওয়াতে পারো? ও ডাক্তার? 'ঘন্টা'? বললে না যে?"

ঘরে ঢোকার মিনিটখানেকের মধ্যে গম্ভীর মুখে বেরিয়ে যেতে যেতে অম্বুজ বললেন "নয়"!