Monday, February 25, 2019

দেশদ্রোহী

"যুদ্ধ নয়? শান্তি চাই?? শান্তি!!! শালা নিজেকে বাঙালি বলতে লজ্জা করে না আপনার? জানেন, এই বাংলার থেকে ক্ষুদিরাম বোম মেরে ফাঁসিকাঠে গেছে? নেতাজির ভয়ে ইংরেজ এর হৃৎকম্প উঠেছে? রবীন্দ্রনাথ নাইট উপাধি লাথি মেরেছেন?"

হ্যাঁ, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এই উগ্র দেশপ্রেম থেকে সাবধানও করেছেন বারেবারে সেটা তো মানেন?

"কি বলছেন মশায়? রবীন্দ্রনাথ এর থেকে বড় দেশপ্রেমী আর আছেন নাকি? রবীন্দ্রনাথ প্রথম বঙ্গভঙ্গ রুখেছিলেন, দ্বিতীয়টা আর রোখা যায়নি, কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ কলকতাটা পাকিস্তানে যাওয়া থেকে আটকেছিলেন, হোয়াটসয়াপ এ পেয়েছেন নিশ্চই?"

ইয়ে, আপনি চার অধ্যায় পড়েছেন? এক দেশপ্রেমিক বিপলবী দলের নেতা মাষ্টারমশাই কখনো দলের মোহে এক মহিলাকে দলের মধ্যমনি বানিয়ে রাখেন ছেলেদেরকে দলে আটকে রাখতে, আবার তাকেই সরিয়ে দেবার জন্য হাত কাঁপে না তার যখন সে মেয়ে ভালোবেসে ফেলে দলের সেরা ছেলেটিকে? পড়েছেন?

"কি বলছেন মাইরি? এ সব লিখেছে দাড়িবুড়ো?"

লিখেছেন তো! আর ঘরে বাইরে? যেখানে জমিদার নিখিলেশ স্বদেশী দলের নেতা সন্দীপকে বলছেন, স্বদেশী যদি তার জমিদারির গরিব লোকেদের, যার অধিকাংশই গরিব মুসলমান, রুটিরুজিতে টান ফেলে তবে সেই স্বদেশী তিনি হতে দেবেন না?

"য়াঁ! ইল্লি! আবার মুসলমান? শালা একা নেহেরুতে রক্ষা নেই শালা শিলাইদহের অত্যাচারী জমিদারটা দোসর ছিল বলছেন??!! শালা এই সব লিখে মালটা আশি অব্দি বেঁচে গেলো? বাংলাটা শালা আপনার মতোই বিনা শিরদাঁড়া মালে ভর্তি, একটা নাথুরাম জন্মায় না শালা।
যাই হোক, একটু ধন্যবাদ আপনারও প্রাপ্য। আমি আবার একটু শিক্ষাফিক্ষা নিয়ে থাকি বুঝলেন? দু চারটে স্কুলের ম্যানেজমেন্ট এ আছি। নিজেরও একটা স্কুল খুলছি এ বছরই, নাম দিচ্ছিলাম আরেকটু হলে 'রবীন্দ্র বিদ্যালয়', লাইসেন্স ও চলে এসেছে ওই নামে।"

তাহলে এবারে কি করবেন?

"দাদা, ওই দেশদ্রোহীর ভাবনা তো রাখা সম্ভব হবে না স্কুলে। সহজপাঠ টহজপাঠ এক্কেরে বাদ।কিষেনজির কথা বা কথাঞ্জলি রাখব সিলেবাসে তাও ভালো।"

আর স্কুলের নামটা?

"ভেবে নিলাম এক্ষুনি। পুরোনোটা না বদলে একটা শব্দ গুঁজে দেব। এখনই বলছি না। আপনার ঠিকানাটা দিন একটা হ্যান্ডবিল আপনাকেও পাঠিয়ে দেবখন। হাজার হোক আপনার শ্বশুরবাড়ির এলাকা, দু-একখান ছাত্র আপনিও, মানে, হেঁ হেঁ"।

.
.
.

আজ সকালের ডাকে এসেছে।

হ্যান্ডবিল।

ছবি রইল।