Wednesday, June 6, 2018

মা রিপ্লাগড নিষাদ!

"দেখুন রত্নাকর বাবু, এই নারদ মিত্তির আর ব্রম্ভানন্দ বোস এর রিকভারি এজেন্সি আজ অব্দি কখনো ফেল মারেনি। ই এম আই বলুন, ঘর ওয়াপসি মেয়েছেলে বলুন, তরমুজ সুব্রত মুখুজ্জে বলুন, সব ঘরের ছেলে ফেরত এনে দিয়েছে ঘরে।

আমরা মানুষে বিশ্বাস করি। আপনার মুখ দেখেই মনে হল ভিড় বাসে কনুই মারার ন্যায্য পেট্রিয়ার্কি অব্দি কোনদিন চাখেননি আপনি। টুলো পন্ডিতের বাড়ি জন্ম নিয়ে আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গেও কখনো বলেননি 'ওদের বাড় বড্ড বেড়েছে'। সেজন্যেই আপনাকে ঘরে যেতে দিলাম একা, শেষ অপশন হিসেবে।

কিছু জোগাড় হল? অন্ততঃ এমাসের হাউসিং লোন এর কিস্তিটা? আপনার মাইরি বাপ পেনশন পায়, বৌ আর ভাই চাকরি করে, ই এম আই ডিফলটার হওয়া কি আপনার মানায়?"

রত্নাকর খানিকটা ঝিমিয়ে ছিলেন তৃণমূল এর বংগবিভূষন পাওয়া বামপন্থী তাত্ত্বিক এর মতন। এইবারে ফেটে পড়লেন হতাশার রাগে।

"স্যার, ছেড়ে দিন এসব দুঃখের কথা।

ঘরে বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিছু ধারের জন্যে। মা বললে, 'আজ 10 বছর ধরে শুধু বাড়িভাড়া অথবা ই এম আই ছাড়া এক পয়সা ঠেকাও না তুমি। পেনশন বাড়ে না, না বাড়ে তোমার কন্ট্রিবিউশন, এমনকি মোদির 15 লাখও ভাতে বাড়ল না চার বছরে। তোমার পাপ আমরা নেব ক্যানে? এমনিতেও তোমার মত মেনিমুখো ব্যাটন না খেলে জ্ঞানচক্ষু খুলবে না।'?

বৌকে বললাম দুঃখের কথা। বৌ বলল, 'তুমি সারাজীবন আমায় কি দিয়েচ বলবে, যে আজ আমায় সারদা সুদীপ্তর দেবযানী ভেবে পুজোকমিটির মত চাঁদা চাইতে এসেছ? মাসের শুরুতে ঐ দয়া করে বাড়ির ই এম আই, কাজের লোকের মাইনে, ঘোঁতনের স্কুলের মাইনে, স্টেশনারি আর মুদি দোকানের পয়সা, ফোনের ডাটা, ইলেক্ট্রিসিটি বিল ভরে মাথা কিনে নিয়েছ? পনের বছর ধরে বিয়ের আংটি বদল করবার কথা বলছি, আমার বৌবাজারের অফিসের গলিতে এম সি সরকার থেকে একটা মঙ্গলসূত্র দিতে বলেছি, কোনদিন কানে নিয়েছ সে কথা? আমার বাপ মা এ কোথায় ফেলে দিল ঈশ্বর! আজ দশটা ডাক্তার প্রফেসর ধাওয়া করত বাড়ি অব্দি আমার সম্বন্ধ নিয়ে।'

ভাই বলল, 'দাদা, ডোনেশন দিয়ে ডাক্তারিতে ঢুকিয়েছিলি ঠিক আছে। সাথে রেখেছিলি ঠিক আছে। কিন্তু দু পয়সা কখনো হাতে তুলে দিয়েছিলি সিনেমা দেখবি বলে?! আজ বিনে পয়সায় ওষুধ লিখিয়ে নিতে নিতে ই এম আই চাইবি? এর থেকে সোজাসুজি বলে দে আলাদা হয়ে যাই!!!'"

গলা বুজে আসে রত্নাকর এর। তাও বলে চলেন ...

"নারদ বাবু, ছাড়ান দিন এসব, বাড়ি আপনি জবরদখল করুন, ফিরিয়ে দিন ব্যাংক কে, যা খুশি করুন।

আমি আপনার ডেরা থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফিরছি না। যৌবনে রগরগে গল্প, চিটচিটে ভাবালুতা মিটমিটে প্রেম আর টসটসে ইমোশন দিয়ে বলবার অভ্যাস ছিল খুব বন্ধু বান্ধবী দের। নিজের নাম ভাঁড়িয়ে রাখব যুগের উপযোগী দো-আঁশলা কিছু, যেমন, 'অসভ্য-মিকি' বা এরকম কিছু একটা, চিৎপুরে একটা এককামরার ঝুপড়ি নেব ভাড়া, আর যাত্রার চিত্রনাট্য লিখব।

একটা সামাজিক আইডিয়া তো এক্ষুনি মাথায় খেলছে। নাম রাখা যায় 'রামের উন্নয়নের টাকায় সীতের কন্যাশ্রীর সাইকেল'। ঐ দিয়েই শুরু করি। পরে স্বচ্ছ ভারত নিয়েও কিছু একটা নামাবখন।

আপনারাও ভালো থাকুন।"

হনহন করে হাঁটা দেন রত্নাকর রায়।

হতভম্ব নারদ মিত্তির ডান কান চুলকে রত্নাকর এর ফেলে যাওয়া পথের পানে তাকিয়ে চোখ বুজে থাকা ব্রম্ভানন্দকে বলেন, "ছোকরা মহাকাব্য লিখবে একদিন, মিলিয়ে নেবেন"!!!