Tuesday, October 9, 2018

এক আকেলা মনখারাপ

দিকভ্রান্ত, ঠিকানাভোলা
উদাসীন, মনখারাপি
ইমারত, ডিভাইডার আর মেশিনপত্রের ভিড়ে হাঁটতে হাঁটতে
অভ্যেস এর বশে পকেট হাতড়ে চমকে ওঠা
আর, দিন গুজরান এর নিত্যিনতুন তত্ত্বতালাশ।
বেলাশেষে একটা ছাত এর আশা,
পাবে?

সকালের আলোয় মুখ লুকোনো
রাতের কালোয় গিলে ফেলার ভয়
চোখের কালির আঢাকা অস্বস্তি
জল শুকোনো, কিন্তু কান্নার ভাপে ভেজা।
ছেলে ঘুমিয়ে পড়লো এতক্ষনে নিশ্চই,
পারবে ফিরতে?

সময় রাস্তা কেবলই এগোয়, ফুরোয়? না,
তবু কত লোকে বেরিয়ে পড়েছে আড় ভেঙে
শুধু বেরিয়ে পড়ার ছটফটে অভ্যেস এ
অথবা, বসে থাকতে, চেয়ে দেখতে, লজ্জা পেত বলে।
খুঁজছে, আরেক উদভ্রান্ত, জিরোবে একসাথে দুদন্ড,
দেখা হবে?

Wednesday, July 25, 2018

অল্প কল্প গল্প ১

'শুনছ?'

হুমমম...

'শুনছ?'

হুমমম...

'আরে একটা মিনি লগ আউট করো না মিনিট পাঁচেক এর জন্য ক্লাউডঅফিস থেকে!!'

উফফফ। দাঁড়াও। হুমম। এবারে বল।

'বলছি টেসলা থেকে টেলিপ্যাথিটর এ একটা সেনসেজ পাঠাল এইমাত্র।'

আবার সেই প্রাক একবিংশ যুগ এর কুমড়োর ছক্কার রেসিপি???!!! তোমার ব্রেন ম্যাপিং করে ওরা এইসবই তো পাঠাতে থাকে!!! আবার কুমড়ো আনতে য়্যামাজন ইথিওপিয়াতে অর্ডার দাও, গন্ডা গন্ডা পয়সা ভর হাইপারলুপ ডেলিভারির!

'ধেততেরি! সেসব না! ঘন্টু!'

সে ঘুমিয়েছে?

'হ্যাঁ, অনেকক্ষন, তবে ওকে নিয়েই সেনসেজ টা'

কি বলছে?

'বলছে একটা মেজর ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট রয়ে গেছে'

সে কি হে? টেসলার রোবোবেবি তে ডিফেক্ট? তবে যে কি সব জিরোসিগমা ফিগমা বলে বারফটটাই মারে?!!!

'শোনোই না! বলছে স্লিপ বাটন দিতেই নাকি ভুলে গেছে। খুব দুঃখপ্রকাশ করেছে আর বলেছে বদলে আনা যাবে বিনাখরচে, সাথে একটা রোবোডগি ফ্রি দেবে'

তুমি কি বল?

'অনেক ভাবলাম। কিন্তু তোমায় খুলেই বলি, এই প্রতিদিন ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে ঘন্টুকে ঘুম পাড়াতে মন্দ লাগে না। তুমি কি বল?'

আমি? না, সে রাত্রে ঘুমোতে না চেয়ে চশমার ডাঁটি চেবালে রাগ হয় বটে, তবে পেছনে চাঁটা খেয়ে রাগ করে যখন ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তখন একঘর আদর আদর লাগে কিন্তু। ঘন্টা ওরমই থাক।

'ঠিক বলেছ, স্লিপ বাটন মাথায় থাক। বালাই ষাট আমাদের ঘন্টুর।'

Wednesday, June 6, 2018

মা রিপ্লাগড নিষাদ!

"দেখুন রত্নাকর বাবু, এই নারদ মিত্তির আর ব্রম্ভানন্দ বোস এর রিকভারি এজেন্সি আজ অব্দি কখনো ফেল মারেনি। ই এম আই বলুন, ঘর ওয়াপসি মেয়েছেলে বলুন, তরমুজ সুব্রত মুখুজ্জে বলুন, সব ঘরের ছেলে ফেরত এনে দিয়েছে ঘরে।

আমরা মানুষে বিশ্বাস করি। আপনার মুখ দেখেই মনে হল ভিড় বাসে কনুই মারার ন্যায্য পেট্রিয়ার্কি অব্দি কোনদিন চাখেননি আপনি। টুলো পন্ডিতের বাড়ি জন্ম নিয়ে আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গেও কখনো বলেননি 'ওদের বাড় বড্ড বেড়েছে'। সেজন্যেই আপনাকে ঘরে যেতে দিলাম একা, শেষ অপশন হিসেবে।

কিছু জোগাড় হল? অন্ততঃ এমাসের হাউসিং লোন এর কিস্তিটা? আপনার মাইরি বাপ পেনশন পায়, বৌ আর ভাই চাকরি করে, ই এম আই ডিফলটার হওয়া কি আপনার মানায়?"

রত্নাকর খানিকটা ঝিমিয়ে ছিলেন তৃণমূল এর বংগবিভূষন পাওয়া বামপন্থী তাত্ত্বিক এর মতন। এইবারে ফেটে পড়লেন হতাশার রাগে।

"স্যার, ছেড়ে দিন এসব দুঃখের কথা।

ঘরে বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিছু ধারের জন্যে। মা বললে, 'আজ 10 বছর ধরে শুধু বাড়িভাড়া অথবা ই এম আই ছাড়া এক পয়সা ঠেকাও না তুমি। পেনশন বাড়ে না, না বাড়ে তোমার কন্ট্রিবিউশন, এমনকি মোদির 15 লাখও ভাতে বাড়ল না চার বছরে। তোমার পাপ আমরা নেব ক্যানে? এমনিতেও তোমার মত মেনিমুখো ব্যাটন না খেলে জ্ঞানচক্ষু খুলবে না।'?

বৌকে বললাম দুঃখের কথা। বৌ বলল, 'তুমি সারাজীবন আমায় কি দিয়েচ বলবে, যে আজ আমায় সারদা সুদীপ্তর দেবযানী ভেবে পুজোকমিটির মত চাঁদা চাইতে এসেছ? মাসের শুরুতে ঐ দয়া করে বাড়ির ই এম আই, কাজের লোকের মাইনে, ঘোঁতনের স্কুলের মাইনে, স্টেশনারি আর মুদি দোকানের পয়সা, ফোনের ডাটা, ইলেক্ট্রিসিটি বিল ভরে মাথা কিনে নিয়েছ? পনের বছর ধরে বিয়ের আংটি বদল করবার কথা বলছি, আমার বৌবাজারের অফিসের গলিতে এম সি সরকার থেকে একটা মঙ্গলসূত্র দিতে বলেছি, কোনদিন কানে নিয়েছ সে কথা? আমার বাপ মা এ কোথায় ফেলে দিল ঈশ্বর! আজ দশটা ডাক্তার প্রফেসর ধাওয়া করত বাড়ি অব্দি আমার সম্বন্ধ নিয়ে।'

ভাই বলল, 'দাদা, ডোনেশন দিয়ে ডাক্তারিতে ঢুকিয়েছিলি ঠিক আছে। সাথে রেখেছিলি ঠিক আছে। কিন্তু দু পয়সা কখনো হাতে তুলে দিয়েছিলি সিনেমা দেখবি বলে?! আজ বিনে পয়সায় ওষুধ লিখিয়ে নিতে নিতে ই এম আই চাইবি? এর থেকে সোজাসুজি বলে দে আলাদা হয়ে যাই!!!'"

গলা বুজে আসে রত্নাকর এর। তাও বলে চলেন ...

"নারদ বাবু, ছাড়ান দিন এসব, বাড়ি আপনি জবরদখল করুন, ফিরিয়ে দিন ব্যাংক কে, যা খুশি করুন।

আমি আপনার ডেরা থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফিরছি না। যৌবনে রগরগে গল্প, চিটচিটে ভাবালুতা মিটমিটে প্রেম আর টসটসে ইমোশন দিয়ে বলবার অভ্যাস ছিল খুব বন্ধু বান্ধবী দের। নিজের নাম ভাঁড়িয়ে রাখব যুগের উপযোগী দো-আঁশলা কিছু, যেমন, 'অসভ্য-মিকি' বা এরকম কিছু একটা, চিৎপুরে একটা এককামরার ঝুপড়ি নেব ভাড়া, আর যাত্রার চিত্রনাট্য লিখব।

একটা সামাজিক আইডিয়া তো এক্ষুনি মাথায় খেলছে। নাম রাখা যায় 'রামের উন্নয়নের টাকায় সীতের কন্যাশ্রীর সাইকেল'। ঐ দিয়েই শুরু করি। পরে স্বচ্ছ ভারত নিয়েও কিছু একটা নামাবখন।

আপনারাও ভালো থাকুন।"

হনহন করে হাঁটা দেন রত্নাকর রায়।

হতভম্ব নারদ মিত্তির ডান কান চুলকে রত্নাকর এর ফেলে যাওয়া পথের পানে তাকিয়ে চোখ বুজে থাকা ব্রম্ভানন্দকে বলেন, "ছোকরা মহাকাব্য লিখবে একদিন, মিলিয়ে নেবেন"!!!

Tuesday, May 22, 2018

ঘুম ও জেসুদাস

কখনো কোন সমান্তরাল বিশ্বে, রেষারেষি আর স্বার্থপরতার ঝকমকে আলো কমে এলে পর, কিশোর রফি মান্না ইত্যাদি গুরুপুজোর ভক্তদের হইহুল্লোড় ফিকে হবার পরে, ঝড়ের পরের ঠান্ডা হাওয়ায় মাটির পিদিম জ্বালিয়ে গান গাইতে বসেন কাট্টাসেরি জোসেফ জেসুদাস।

জেসুদাস এর গান এর প্রতিবেশী বাজনা ও বাহুল্যরা মন বসাতে পারে না কাজে, কেমন যেন ঝুম মেরে ভগবানের গলা শুনতে বসে মাটির মেঝেতে থুবড়ে নিজের কাজ ভুলে, ঠান্ডা শরীরে ভাবুক স্যাক্স শোনে "য়্যায় মেরে উদাস মন, চল দোনো কহিন দূর চলে, মেরে হামদম, তেরে মঞ্জিল ইয়ে নেহি ইয়ে নেহি কোই অওর হ্যায়"।

রাত বাড়লে ফেরবার রাস্তা পেরিয়ে যাবার পথে চাঁদ আবদার ধরে "চাঁদ আকেলা জায়ে সখী রে, মন মোরা ঘাবরায়ে রে" শুনবার, সে একটু ডুবতে দেরি হোক বরং একলাইন "ও বৈরাগী, ও মনভাওন, কব আয়েগা মোরে আঙন" এর মনকেমনের টানে।

ক্যালেন্ডার এর পাতা থেকে রাধামনি নেমে আসেন "কা করু সজনী, আয়ে না বালাম" এর অপেক্ষার পুজোর দু ফোঁটা চোখের জল ফেলতে। অন্ধ কৃষ্ণপুজো তো অনেক হল, ঐ ম্যাজিক গলার "ইয়ে জগ সারা, নিদ সে হারা, মোহে নিদ না আয়ি" স্তব, সে কি কম কাছের?

সব শেষে ইনসমনিয়ায় ভোগা দেবাদিদেব মুখ ঢেকে জেসুবাবুর কুটিরের পেছনের দরজা দিয়ে আসেন একে একে বাকিরা বিদায় নিলে। জেসুবাবু মুচকি হেসে তানপুরা তুলে গলায় মোলায়েম স্বর্গমাখা সুর তুলে নেন ঘুমপাড়ানিয়া অনুরোধে ...

"কোই গাতা ম্যায় শো যাতা" শুরু হয় অদ্ভুত মায়ার হাত বুলিয়ে গলার কাছে জমে থাকা বিষের জ্বালা ভুলিয়ে, "কোই মেরা শর গোদি মে রাখ সহলাতা, ম্যায় শো যাতা"র হাতপাখার মিঠে হাওয়ায় ঘুম নেমে আসে চোখে।

জেগে থাকেন, টিমটিম করে তারাদের সাথে আলো দিতে থাকেন কাট্টাসেরি জোসেফ জেসুদাস।

Sunday, May 20, 2018

বাফ ছেড়ে বোদ্ধা সাজার সহজ উপায় ১

2012 সালে সাইট এন্ড সাউন্ড পত্রিকা দুনিয়াভর এর স্বনামধন্য চিত্রপরিচালকদের নিয়ে বিশ্বের সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র বিষয়ে একটি সমীক্ষা করে। প্রথম স্থানে উঠে আসে একটি জাপানি সিনেমা যা প্রথম স্থানের দৌড়ে একেবারেই ছিল না। এমনকি একই সার্ভেতে ক্রিটিক্স বিভাগেও সেই একই সিনেমা, যার নাম 'টোকিও স্টোরি', তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

ছবির সময়:1953
পরিচালক: ইয়াসুজিরো ওজু

এক বৃদ্ধ দম্পতি যাঁরা তার ছোট মেয়ের সাথে মফস্বলে থাকেন, তারা দেখা করতে আসেন তার ছেলে মেয়েদের সাথে প্রথমবার যুদ্ধোত্তর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এর পদধ্বনি ওয়ালা টোকিও শহরে। ছোটখাটো ডাক্তার বড় ছেলে, বিউটি পার্লার চালানো বড় মেয়ের সাথে থাকার সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে শিগগিরই, যদিও তাতে তাদের স্ত্রী বা স্বামীর ভূমিকা কখনোই প্রধান হয় না। মেজ ছেলের বিধবা স্ত্রী একমাত্র ভরসা হয় অচেনা শহরে। বুড়ো এক রাত্রে কিছু পুরোনো টোকিওপ্রবাসী বন্ধুদের সাথে পানভোজন এর আধিক্যে করেন আত্মসমীক্ষন ও খানিকটা সমাজ এর মূল কাঠামোর বদলের পর্যালোচনা। ফিরে আসার পথে ওসাকা তে রেলচাকুরে ছোট ছেলেও খুব একটা আশা জাগায় না। বুড়ো বুড়ি ফিরে আসেন নিজের জায়গায়। বুড়ি মারা যান। ছেলে-মেয়েরা ব্যস্ত সময় থেকে একচিলতে সময় বার করে দায়িত্ব পালন করতে আসে। ফিরেও যায়। বুড়ো আর বিধবা বৌমা, বিধবা বৌমা ও ছোট মেয়ের কিছু সংলাপে ধরা থাকে আধুনিক সভ্যতা ও পরিবারের মধ্যের টানাপোড়েন গুলো।

বিয়ে না করে সারা জীবন মায়ের সাথে কাটানো পরিচালক (সূত্র: আই এম ডি বি) তার স্বভাববসতই হেলে থাকেন পুরনো পারিবারিক মূল্যবোধের দিকে, কিন্তু কখনই তিক্ততা আনেন না, বরঞ্চ বার বার জোর দেন আত্মসমীক্ষন বা বদলের অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে। স্থির, মাটি থেকে তিন হাত মাত্র ওপরের ক্যামেরায় নেয়া অধিকাংশ শট ছবিকে একটা সিগনেচার স্থিরতা আর গ্রাউন্ড রিয়ালিটিসংলগ্নতা দেয়। গোটা ছবি প্রশ্ন করতে থাকে বারবার একটা ধারণাকে, 'এ চাইল্ড কান্ট সার্ভ হিজ পেরেন্টস আফটার গ্রেভ'। উত্তরও আসে, তবে তা সাদা বা কালো হয় না, ধূসর এই ছবির আত্মা। মিনিমালিস্টিক, জাপানি কালচারের মতই এ ছবির বক্তব্য।

আই এম ডি বি ট্রিভিয়া বলছে, সত্যজিৎ রায় ছবিটি দেখতে দেখতে শেষের দিকে একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েন। কতটা ঠিক জানা নেই, কারন, সত্যজিৎ বাবু নিজে অপরাজিত করার ভাবনা শুরু করেন মা মারা যাবার পর অপুর মনের চাপা খুশির বৈপরীত্বে ইন্টারেস্টেড হয়ে ('মাই ইয়ার্স উইথ অপু')। কিন্তু মনে হল টোকিও স্টোরি ছবির আত্মা জাপানি ছবি ভক্ত পরিচালকের 'শাখা প্রশাখা'তে ফিরে এসেছে একটু হলেও।

বুড়ি টোমির সাথে ছোট নাতির ঘাসের উপর খেলা, বিধবা মেজ বৌ এর তিক্ত দাম্পত্য স্মৃতি ও নতুন দুনিয়ার হাতছানি উপেক্ষা করে অভ্যাস এর গোলামী, সমুদ্রতীরে সৈকতাবাসে বুড়ো বুড়ির আত্মসমীক্ষন, বুড়ির মৃত্যূর পর ছেলেমেয়েদের ও বাবার মুখোমুখি সংলাপ, ছবির শেষ হওয়ার পরেও সামনে ভাসতে পারে।

কখনো সময় হলে, যা এই ছবির মধ্যবয়সী পাত্রপাত্রী বা আমাদের একেবারেই হয় না ঝুটো এবং ঠুনকো প্রায়রিটির জন্য, দেখে নেয়া যেতেই পারে।

Tuesday, May 15, 2018

দি ইকোনমিক টাইমস (রিপ্লাগ)

দু হাজার চার এ যখন টুম্পা আমি গ্রাফাইট ইন্ডিয়া লিমিটেড এ সার্টিফাইড কয়লা কুলির চাকরি ছেড়ে এমবিএ নামক তৎকালীন আলাদিন এর আশ্চর্য প্রদীপটি হাতাবার অপচেষ্টায় কলকাতা নামক 'বিশাল' শহরে আসি যথাক্রমে মফস্বল আমার মনের শহর মেদিনীপুর ও তৎপরবর্তী আরেক মফস্বল আমার নেমেসিস শহর দুর্গাপুর ছেড়ে, আমার শুভাকাঙ্খী কলিগ কাকু, যিনি এখন একটি নামী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট, তিনি ভেঙে পড়া ভীত আমিকে পার্টিং উপদেশ ছুঁড়ে মারেন: "সার্থক, সবসময় মনে রাখবে দুনিয়াটা কিন্তু অনেক বড়", যা নিয়তির ডাকে বা কালসর্প দোষে বীভৎস রকম মনে ধরে আমার।

তৎকালীন ক্যামাক স্ট্রিট এ একটি এমবিএ এন্ট্রান্স টেস্ট কোচিং সেন্টার এ ভর্তি হই যা ছিল সম্ভবত বিদুর কাপুর নামে একজন আইআইএম য়্যালুমনির এন্ত্রেপ্রেনিউরল প্রতিষ্ঠান। এহেন হনু বিদুর বাবু, যিনি নামের মাহাত্মে প্রাচীন কালে ধৃতরাষ্ট্র থেকে সকলকেই ফ্রিতে জ্ঞান বিতরণ করে বিরক্ত ও তাড়না করে আসছেন, তার অত্যন্ত ঝকঝকে বহিরাঙ্গ এবং ততোধিক ফরফরে ইংরেজির কারণে প্ৰথম দিনই আমার মনে তুমুল তৃণমূল স্তরে মনোনয়নবিহীন প্রভাব বিস্তার করেন, যার কারণ মূলতঃ দুটি। এক, উনি আমার পূর্বোক্ত কাকুর বড় পৃথিবী দৈববানী পুনরাবৃত্তি করেন ও চাকরি ছেড়ে বাবার পয়সায় বাবুয়ানি করতে আসার পাপবোধকে বুর্জোয়া দক্ষতায় ধামাচাপা দেন। দুই, তার ইংরেজি ভাষাদক্ষতা ও বাচনশক্তি, যা বাংলামিডিয়ামাটাইটিস ও দেখমফতুইক্যাবলাকেমনাইটিস এ ভোগা রোগাভোগা আমাকে এ প্লাস গোত্রের বিজনেস স্কুলের জন্নতের দরজায় আইসিসজেহাদি টোকা মারার স্বপ্না্দ্য চুলকুনি উপহার দিতে সফল হয়।

সে যুগে চোখ বুজে আমি যেকোন লোককে ভক্তদের করা মুদিবাবুকে বিশ্বাস এর মত লালায়িত বিশ্বাস করতাম, যদি তিনি একটু চকচকে দেখতে ও ভাল ইংরেজি বলতে পারতেন।

তো এই বিদুরবাবুর চাকচিক্যের প্রভাবে আমি একটি যৌবনের কুঅভ্যাসে পড়ি প্রথমবার। দি ইকোনমিক টাইমস নামক পত্রিকার গ্রাহক হয়ে পড়ি। বিদুরবাবুর বাতবাজি আমায় কনভিন্স করে, যতদিন না কেউ এই মহান চোরদুনিয়ার মুখপত্র লিটিল ম্যাগাজিনটির পাতা না উল্টোবে, ব্যবসায়িক দুনিয়ার আঁতেলরা ততদিন তোমাকে সাপ্তাহিক বর্তমান এর মতই অচ্ছুৎ করে রাখবে।

আমি প্রথম দিন এই পত্রিকাটির চারপাতা পড়ি, দ্বিতীয়দিন দুপাতা, তৃতীয়দিন একপাতা, চতুর্থদিন এক কলম, পঞ্চমদিন একটি খবর, ষষ্ঠদিন থেকে দিলীপবাবুর মার্কশিট পাওয়ার মতন পড়া অর্থাৎ পড়া বন্ধ হয়। কিন্তু এই নিষিদ্ধ বস্তুটির লাল মার্কসীয় রঙ, বেচবার পরে মোটা দাম (সম্ভবত একটাকা প্রতি কেজি বেশি), আরো না জানি কি, এতটাই প্রভাব বিস্তার করে, নেশার ঘোরে আমি প্রতি মাসে ঐ নিষিদ্ধ জিনিস নিতে, জমা করতে ও বেচতে থাকি। সব খারাপেরই শেষ থাকে, একদিন এন্ট্রান্স এগজাম এর রেজাল্ট বেরোতে আমার মসজিদদৌড় বন্ধ হয় এবং আশার য়্যালকোহলসমাধি ঘটে। ধাক্কা পেয়ে প্রথম কাজ হিসেবে আমি এই সাবস্ক্রিপশন বন্ধ করি এবং আশ্চর্য্যজনক ভাবে একমাসের মধ্যে একটি নবরত্ন কোম্পানিতে ঠিকঠাক একটি চাকরি জোগাতে সক্ষম হই।

ঠিক এর চার বছর পরে, সেই পূর্বোক্ত কাকুর অমোঘ দার্শনিক বড় দুনিয়ার লাইন আমার বেওকুফ বোহেমিয়ানাকে আবার কামড়ে দেয়, এবং এমবিএ হওয়ার কামজ্বর এ পুনরাক্রান্ত হয়ে আমি চাকরি লাথি মেরে কোনমতে গড়ের মাঠের শহরের বুকে একটি ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড এ গড়পড়তা কিন্তু আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতার গড়ের উপরের বিগ্রেড বি স্কুলে ভর্তি হই।

ফ্যাকাল্টি হিসেবে এক ভদ্রলোককে পাই যিনি প্রচন্ড দুর্মুখ এবং সকলকে অপমান করা সদর্পে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আমার কর্পোরেট জগতের অভিজ্ঞতায় তখন আমি সেই লোকদেরই বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যারা প্রচন্ড অপমান করেন ও অপমানটাকে শিল্পের (চপ নয়) পর্যায়ে নিয়ে যান। সম্ভবত তারাপদবাবুর রচনায় পড়েছিলাম যে ডাক্তারবাবু যত দুর্মুখ তত বেশি তার পসার, এরকম এক পাগলের ডাক্তারবাবু তার রোগীদের প্রচন্ড অপমান করতেন ও প্রায় সুস্থ করে আনতেন ও শেষে একদিন অপমান করতে করতে কামড়ে দিতেন এবং রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি যেত। সেই 'তারা'বাজি থাক এখন। মোটের ওপর এই ভদ্রলোকের অপমানে মেসমারাইজড হয়ে ওর উপদেশানুসারে আমি আবার ইকোনমিক টাইমস নিতে এবং আবার না পড়তে শুরু করি।

দেড় বছর পরে, দু হাজার দশ নাগাদ, আমি হঠাৎ করে আবিষ্কার করি ইকোনমিক টাইমস এর নিষ্কলঙ্ক পাতার মতই যেকোন কারনে আমার চাকরির ভাঁড়ার শূন্য যেখানে প্রায় আধা ডিপার্টমেন্ট মোটের ওপর একটা করে চাকরি হাতের মুঠোয় নিয়েছে।

শোকাহত হয়ে, মাঝরাত্তিরে, একান্তে, তুমুল চানাচুরসহ জলপথে গভীর ইন্ট্রোস্পেকশনে বসে যখন আমি আমার এই চরম গঙ্গাপ্রাপ্তির পরিণতির গোমুখসন্ধানে ব্যস্ত, তখন চোখে পড়ে ঘরের কোনের ইকোনমিক টাইমস এর বোঝার দিকে। বিশ্বাস করবেন না, ঝপ করে মাথাটা কেমন যেন পরিষ্কার হয়ে যায়। সারারাত না ঘুমিয়ে ভোর পেরনোর পরে প্রথমে কাগজদাদার হাত থেকে আনন্দবাজারটা নিয়ে ইকোনমিক টাইমস টা নিতে বিপ্লবী অস্বীকার করি ও প্রথম যে বেসুরেলা কাগজওয়ালা পাই, তাকে ধরে এনে পুরনো সতীসাধ্বী কাগজগুলোকে বিদায় করি। সেই দেবদূত কাগজওয়ালা আমায় জীবনে প্রথম ও শেষ ব্যক্তি হিসেবে আমাকে জানায় যে আমার খুব যত্ন, ভাঁজ না খোলা ইকোনমিক টাইমস এর প্রভাব ও দিব্যি!

ভগবানের বা কার্ল মার্ক্স এর অশেষ দয়ায় এর এক-দু সপ্তাহের মধ্যেই কি ভাবে যেন একটি কাজ চালানো চাকরির জোগাড় হয়।

এই অকিঞ্চিতকর লেখার একটাই উদ্দেশ্য। কোন ছোট ভাইবোন যদি তাদের বেসিক নেসিসিটি গুলো ছুঁতে পাচ্ছে না শত চেষ্টা করেও, অথচ গ্রহের ফেরে পড়ে ফেলেছে এই প্রলাপরচনা, দেখুন না চোখ বুলিয়ে, ঘরের বা মনের এক কোনে কোন ইকোনমিক টাইমস এর জঞ্জাল জমিয়ে রাখেন নি তো?

বিদায় করুন।

ভালো থাকুন!

Tuesday, April 24, 2018

যক্ষ ও পুনর্জন্ম!

যুধিষ্ঠির: বলছি যক্ষ স্যার, ভাইগুলো সব কেতরে পড়ে আছে, দেখতে একদম ভাল লাগছে না মাইরি। ঐ ভীম সাতঘটি মাধ্বীক এও হালকা টসকায় না, সেও কেমন চোখ উল্টে কেষ্ট।
যক্ষ: দ্বারকার লুজকুমার মালটা?
যুধিষ্ঠির: না, মুখার্জি। একটু ভাষাটা সংযত করলে হত না স্যার?
যক্ষ: ও কলির অভিনেতা! তাও ভাল মাথায় অক্সিজেন কম মনোনয়ন খেকো কেষ্ট বলনি।
যাই হোক, শোন, তুমি নিজে রাজশেখর ঝেড়ে সংলাপ বলছ, আমায় চুলকিও না।
যুধিষ্ঠির: স্যার একটু জল আপনার কলসি থেকে, যদি, চোদ্দ ক্রোশ এর মধ্যে কোত্থাও ....
যক্ষ: আরে খেলে যা! শোন রে ধর্মচো*, বুড়ো বয়সে কেউ পাত্তা দেয় না, মেনকা আমার আশ্রম এর পেছনে ইন্দ্রকে নিয়ে বেলেল্লাপনা করে, আমি দুটো কথা বলতে গেলে আমায় সুড্ডা বলে খিস্তি করে, এই যে আমিই কেবল জানি এখানে জল কোথায়, তার সুযোগ আমি ওঠাব। তোর বর্বর ভাইগুলো আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেড়ে জল খেতে গেছিল, ওতে দু ফোঁটা বিচিত্রবল্লরির (বিছুটিপাতা) রস মিশিয়ে ঘায়েল করেছি, প্রতিষেধক কেবল আমার জানা। এবারে বল আমার প্রশ্নের উত্তর দিবি কি না?!
যুধিষ্ঠির: আপনি শুরু করুন স্যার। তবে দেখবেন, একটু সোজা দেখে করবেন, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি আর ইস্ট জর্জিয়ার ডিলিট তো, বিদ্যা ব্যাপারটা বালন পর্যন্ত ....
যক্ষ: থাম। বাঙালি হয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে জ্ঞান লাগে নাকি?
যুধিষ্ঠির: বাঙালি কি স্যার? ইন্দ্রপ্রস্থ তো সেই নর্থ ইন্ডিয়া ....
যক্ষ: থাম শালা! কাশিদাসীর জ্ঞান নিয়ে ব্যাসবুড়োর সমসসসসকৃত চো** না!
যুধিষ্ঠির: কর্নকুহর প্রজ্জ্বলিত করে দিলেন স্যার, আপনি zeeগান বরং।
যক্ষ: হ্যাঁ, ওপারের মাল, বলে কিনা ইন্দ্রপ্রস্থ! অমন অনেক দেখেছি! সিএফেল জিতলে পটকা ফাটায়!
আচ্চা বল, তিনটে প্রশ্ন করব মাত্র।
বলতো, আলস্য কি?
যুধিষ্ঠির: আজ্ঞে, ধর্মের পালন না করা।
যক্ষ: এহ্হ্হঃ। শালা ছাত্রবন্ধুর মাল। আগেই বুঝেছি।
শুনুন, আপনি কিছুই জানেন না। আমি বলছি জেনে রাখুন।
আলস্য হল রোববার দুপুরে পাঁঠার মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে যা বাঙালির জীবনে নেমে আসে। তার সাথে কোথায় লাগে জাকির নায়েক আর প্রবীন তোগাড়িয়ার ধর্ম।
যুধিষ্ঠির: আজ্ঞে, ভুল হয়ে গেছে।
যক্ষ: হ্যাঁ, তোর ভুলস্বীকার এর বহর দেখে মনে হয় তোর বংশেই বুদ্ধ জন্ম নেবে।
যুধিষ্ঠির: কে স্যার? গৌতম?
যক্ষ: না! ভটচাজ! ছাড় এসব। বলতো, সুখী কে?
যুধিষ্ঠির: আজ্ঞে যার ঋণ নেই।
যক্ষ: এহ্হ্হঃ। ছায়া প্রকাশনীর মাল। আমি আগেই জানি।
শুনুন আপনি কিছুই জানেন না। আমি বলছি, জেনে রাখুন।
যে বাঙালির সকালে ঘুম থেকে উঠে চা বিড়ি না খেয়ে একঝুড়ি নিয়মিত পায়খানা হয়। যে বাঙালির বিরিয়ানি আর চাপ খেয়ে জেলুসিল খেতে হয় না। তারাই প্রকৃত সুখী।
যুধিষ্ঠির: স্যার, একটু গা জোয়ারী হচ্চে না?
যক্ষ: থাম। তোকে বিজেপির যুবমোর্চা নেতা সিবিএসির প্রশ্ন বলে দিয়েছে? আচ্চা, ফাইনাল বল, তোর কোন একটা অপগন্ড ভাই এর জান ফেরত চাইতে হলে কারটা চাইবি?
যুধিষ্ঠির: আজ্ঞে নকুল বা সহদেব। তাহলে মাদ্রি মায়ের এক সন্তান ....
যক্ষ: আরে খেলে যা!! আমায় ভক্ত পেয়েছ? তুমি দামোদরদাস এর ছেলে? যা বোঝাবে তাই বুঝব?
শুনুন আপনি কিছুই জানেন না। আমি বলছি, জেনে রাখুন।
হ্যান্ডু অর্জুনকে দ্রৌপদী চোখে হারায়, ভীম এর রতি জাগলে তোমার ভীমরতি দেখিয়ে দেবে, তাই ওদের বাদ দিয়ে ধাতুদৌর্বলী জোড়া অশ্বিনীর ব্যাটাকে ফেরাতে চাইছ? পথের কাঁটা দূর করবে? ব্যোমকেশ পড়ছ খুব আজকাল?
যুধিষ্ঠির: আজ্ঞে স্যার, আর লজ্জা দেবেন না। আপনি অন্তর্যামী।
যক্ষ: হ্যাঁ, এমনিতেই আমার সময় শেষ। কোলেস্টরল টা বড্ড ভোগাচ্ছে। ঐ রইল ভালো জল। খেয়ে নে। আর এই রইল গোরচনী সিরাপ। দুচিপি খাইয়ে দে। এর অনেক গুন। কলিকালে এই নিয়ে লোকে পিএচডির থিসিস করবে। তোর অকালকুষ্মান্ড ভাইগুলো জেগে উঠবে। আমার দেহত্যাগ এর সময় হল।
যুধিষ্ঠির: আপনার দেখা আর পাব না স্যার?
যক্ষ: পাবি। কলিকালে সিটিভিএন চ্যানেল এ রাত্রে খবর পড়ব। তখন ফোন করিস। তখন চিনতে পারবি তো?
যুধিষ্ঠির: হ্যাঁ স্যার। না পারলে আপনার সেই অমোঘ লাইন তো আছেই।
"শুনুন, আপনি কিছুই জানেন না, আমি বলছি, জেনে রাখুন"

Friday, March 9, 2018

অবনীশ জোয়ারদার এর মধ্যরাত্রি!

মাঝরাতের মনখারাপি ছায়াছায়া অবনীশ এর বিছানার চারপাশে।
আলোআঁধারির ভয়ে গলা থেকে না বেরনো গোঙানি ঘামেভেজা ঘুমভাঙানিয়া।
উঠে ভাবা, পুরোটাই স্বপ্ন?
স্বপ্ন না হলে কি হবে সেই ভয় এ আলো জ্বালিয়ে ঘুমের চেষ্টা।
না ঘুমে দাঁড়িয়ে উঠে জলের জায়গাটার খোঁজে বসবার ঘর।
পা এর জোর হঠাৎ করে কমে আসা।
দাঁড়াতে পারবে তো আর, আজ রাত্রে, আচ্ছা, অন্ততঃ কাল সকালে?
আই সি ইউ এর বাইরের ডেটলের গন্ধটার মত ভয় ধরানো ভাবনা।
শরীরের ভেতরে একটা শিরশির করা আঁচড়।
অজান্তে হাত খুঁজে চলে অবলম্বন।
নীরবতা, নিরুপায় বসে পড়া।
বুকটা হঠাৎ করে খালি, বাদ পড়ল কোন একটা দরকারি স্পন্দন?
নাকি সেরকম কিছু নয়, ওষুধ বাদ পড়ল কোনোটা?
থাক এখনের ভাবনা, তাহলে কি ভাবা যায়?
দায়িত্বর বোঝার ওপর অভিমান এর শাকের আঁটির চিত্রনাট্য?

'দ্রোন, ভীষ্ম, কৃপরা ধর্মপক্ষ ছাড়লে লড়াই তো অনিবার্য'।

'কিসের ধর্মপক্ষ? রূপান্তরকামীর ঢাল, পুত্রমৃত্যুর মিথ্যা, দেবতার নামে কবচকুন্ডল চুরি, উরুতে নিয়মভাঙা গদাঘাত?'

থাক এসব বরং। তাহলে?
চুন খসে পড়ার ফলাফল শানিত কথার ছুরির ফালাফালা করে দেওয়া হতাশার সংলাপ?

'যা করছি সব তোমাদের জন্য'।

'পাপের ভাগ তো নিতে পারব না, হোক না সে পাপে দায়িত্বপালন'।

এরপরে রত্নাকরও হতাশা কাটাতে আঁকিবুঁকি কাটতেন না?
কিন্তু তা তো ক্রমে হয়ে উঠেছিল সময় উত্তীর্ণ ক্যানভাস, এরকম না পাঠানো চিঠি নয়।
এদিকে প্রানপনে সরাতে পারা যাচচ্ছে না বোধহয় জঞ্জালগুলো।
দম্ভ ভরে 'কেন যাব ... সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাব' বলা লাইনগুলো এ প্রজন্মে ফেসবুক গ্রূপে আর লিটিল ম্যাগ এর পাতায় বন্দী।
খবরে জানিয়েছিল সেদিন, আজকাল নাকি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারও ভর্তি মানুষের উচ্চাশার টুকরোতে।
ঠিক কি ছিল চাওয়াগুলো?
একরাতের মত ভুলতে চাওয়া সামনের মাসে মাইনে সময়মতো না হবার ভয় পাওয়া?
না বোধহয়।
কিছু দিনের জন্য পেতে চাওয়া নিজের একফালি বন্ধকীবিহীন জমি, একটা কোনার ঘর, এক আলমারি বই, একটা টিভিতে রূপকথার আলোআঁধারী, সিনেমাহলের অন্ধ্কার পর্দায় মধ্যমেধার বেড়া পেরোনো দু একটা ক্লাসিক?
মনে পড়ে না।
চোখ ঝাপসা হয়ে আসা আগে ছিল লজ্জার, কখনো গর্বের।
এখন, দুর্বলতার, নীরবতার।
চল্লিশ এসে গেল অবনীশ এর।
একটা বুড়ো থুত্থুড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে।
হাত বাড়াবে, চড়ে ধুঁকতে ধুঁকতে সময় পেরনোর জন্যে।
কি হবে যদি ধরে নেবার আগে 'রাজা' আগে আসেন অবনীশ এর পাড়ায় যেমন এসেছিলেন অমলের জন্য?
দরবার এর মেহ্ফিল এ শ্রোতা চেয়ে বসেন?

সেই দরবার, যে দরবারে বিশু পাগল নন্দিনীর হাত ধরে আসে অকুতোভয় এ, খোঁপায় গুঁজে দেয় রক্তকরবীর গোছা, অন্তুকে মাস্টারমশায়ের ভয় পেতে হয় না মনখারাপের এলাকে কাঁধ পেতে দিতে, নিখিলেশ সন্দীপকে ক্ষমা করে দিতে পারে, শ্রীকান্ত কমললতার কাছে বসে দু কলি গান শুনতে পারে, হেরম্ব দিবারাত্রির কাব্য সাঙ্গ করে সংসার বসাতে পারে, শিবরামবাবু কে খাবারের ভাবনা ভাবতে ভাবতে জোর করে লিখতে হয় না হয় না থোড় বড়ি খাড়া বরং হাত দিতে পারেন পৃথিবী ভালোবাসা আর ঈশ্বরে, এরকম আরো কত কিছু।

মাঝরাতের এফ এম এ সুমনের গলায় পুরনো গানে সেই ধ্রুবসত্যি।
'এখানে জীবন মানেই মৃত্যু, যন্ত্রনা গিলে ফেলা'।
অনেকদিন আগের কথা বলে মনে হয়, একটা সময় ছিল যখন সুমন ছোট্ট পাপড়ি দে কে নিয়ে গান লিখতে পারতেন।
রাতের প্রায় শেষ, শব্দ খোঁজা শেষ, কোথায় ঘুমের দেশ?
অবনীশ জানে না।
ওর জন্য করুনা নয়।
প্রার্থনা থাক।