মাঝরাতের মনখারাপি ছায়াছায়া অবনীশ এর বিছানার চারপাশে।
আলোআঁধারির ভয়ে গলা থেকে না বেরনো গোঙানি ঘামেভেজা ঘুমভাঙানিয়া।
উঠে ভাবা, পুরোটাই স্বপ্ন?
স্বপ্ন না হলে কি হবে সেই ভয় এ আলো জ্বালিয়ে ঘুমের চেষ্টা।
না ঘুমে দাঁড়িয়ে উঠে জলের জায়গাটার খোঁজে বসবার ঘর।
পা এর জোর হঠাৎ করে কমে আসা।
দাঁড়াতে পারবে তো আর, আজ রাত্রে, আচ্ছা, অন্ততঃ কাল সকালে?
আই সি ইউ এর বাইরের ডেটলের গন্ধটার মত ভয় ধরানো ভাবনা।
শরীরের ভেতরে একটা শিরশির করা আঁচড়।
অজান্তে হাত খুঁজে চলে অবলম্বন।
নীরবতা, নিরুপায় বসে পড়া।
বুকটা হঠাৎ করে খালি, বাদ পড়ল কোন একটা দরকারি স্পন্দন?
নাকি সেরকম কিছু নয়, ওষুধ বাদ পড়ল কোনোটা?
থাক এখনের ভাবনা, তাহলে কি ভাবা যায়?
দায়িত্বর বোঝার ওপর অভিমান এর শাকের আঁটির চিত্রনাট্য?
'দ্রোন, ভীষ্ম, কৃপরা ধর্মপক্ষ ছাড়লে লড়াই তো অনিবার্য'।
'কিসের ধর্মপক্ষ? রূপান্তরকামীর ঢাল, পুত্রমৃত্যুর মিথ্যা, দেবতার নামে কবচকুন্ডল চুরি, উরুতে নিয়মভাঙা গদাঘাত?'
থাক এসব বরং। তাহলে?
চুন খসে পড়ার ফলাফল শানিত কথার ছুরির ফালাফালা করে দেওয়া হতাশার সংলাপ?
'যা করছি সব তোমাদের জন্য'।
'পাপের ভাগ তো নিতে পারব না, হোক না সে পাপে দায়িত্বপালন'।
এরপরে রত্নাকরও হতাশা কাটাতে আঁকিবুঁকি কাটতেন না?
কিন্তু তা তো ক্রমে হয়ে উঠেছিল সময় উত্তীর্ণ ক্যানভাস, এরকম না পাঠানো চিঠি নয়।
এদিকে প্রানপনে সরাতে পারা যাচচ্ছে না বোধহয় জঞ্জালগুলো।
দম্ভ ভরে 'কেন যাব ... সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাব' বলা লাইনগুলো এ প্রজন্মে ফেসবুক গ্রূপে আর লিটিল ম্যাগ এর পাতায় বন্দী।
খবরে জানিয়েছিল সেদিন, আজকাল নাকি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারও ভর্তি মানুষের উচ্চাশার টুকরোতে।
ঠিক কি ছিল চাওয়াগুলো?
একরাতের মত ভুলতে চাওয়া সামনের মাসে মাইনে সময়মতো না হবার ভয় পাওয়া?
না বোধহয়।
কিছু দিনের জন্য পেতে চাওয়া নিজের একফালি বন্ধকীবিহীন জমি, একটা কোনার ঘর, এক আলমারি বই, একটা টিভিতে রূপকথার আলোআঁধারী, সিনেমাহলের অন্ধ্কার পর্দায় মধ্যমেধার বেড়া পেরোনো দু একটা ক্লাসিক?
মনে পড়ে না।
চোখ ঝাপসা হয়ে আসা আগে ছিল লজ্জার, কখনো গর্বের।
এখন, দুর্বলতার, নীরবতার।
চল্লিশ এসে গেল অবনীশ এর।
একটা বুড়ো থুত্থুড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে।
হাত বাড়াবে, চড়ে ধুঁকতে ধুঁকতে সময় পেরনোর জন্যে।
কি হবে যদি ধরে নেবার আগে 'রাজা' আগে আসেন অবনীশ এর পাড়ায় যেমন এসেছিলেন অমলের জন্য?
দরবার এর মেহ্ফিল এ শ্রোতা চেয়ে বসেন?
সেই দরবার, যে দরবারে বিশু পাগল নন্দিনীর হাত ধরে আসে অকুতোভয় এ, খোঁপায় গুঁজে দেয় রক্তকরবীর গোছা, অন্তুকে মাস্টারমশায়ের ভয় পেতে হয় না মনখারাপের এলাকে কাঁধ পেতে দিতে, নিখিলেশ সন্দীপকে ক্ষমা করে দিতে পারে, শ্রীকান্ত কমললতার কাছে বসে দু কলি গান শুনতে পারে, হেরম্ব দিবারাত্রির কাব্য সাঙ্গ করে সংসার বসাতে পারে, শিবরামবাবু কে খাবারের ভাবনা ভাবতে ভাবতে জোর করে লিখতে হয় না হয় না থোড় বড়ি খাড়া বরং হাত দিতে পারেন পৃথিবী ভালোবাসা আর ঈশ্বরে, এরকম আরো কত কিছু।
মাঝরাতের এফ এম এ সুমনের গলায় পুরনো গানে সেই ধ্রুবসত্যি।
'এখানে জীবন মানেই মৃত্যু, যন্ত্রনা গিলে ফেলা'।
অনেকদিন আগের কথা বলে মনে হয়, একটা সময় ছিল যখন সুমন ছোট্ট পাপড়ি দে কে নিয়ে গান লিখতে পারতেন।
রাতের প্রায় শেষ, শব্দ খোঁজা শেষ, কোথায় ঘুমের দেশ?
অবনীশ জানে না।
ওর জন্য করুনা নয়।
প্রার্থনা থাক।
No comments:
Post a Comment