"আপনি কখনো বোঝাতেন ওকে? ভূত বলে কিছু হয় না? পুরোটাই আমাদের মনের দুর্বলতা, অবসাদ বা একাকীত্ব?"
না, এত তত্ত্বকথা বোঝানর সুযোগ পাইনি কখনো। ও ছোট থাকতেই আমি বাইরে বাইরে। মায়েরই বেশি ন্যাওটা। তবে ওর মা কিন্তু এসবে বিশ্বাস করে না। সেসব দিক থেকে অনেক শক্ত মনের, একার জোরেই সবকিছু সামলেছে জীবনের। আজও আমাকে খুব একটা পাত্তা দেয় না।
"তাহলে তো মা-রই উচিত নয় কি ওকে বোঝান? 19 বছর বয়সে এসে রাত্রে টিউবলাইট জ্বেলে ঘুমান বোধহয় খুব ভাল একটা অভ্যাস নয়?"
আমিও তাই মানি। চেষ্টা করি ওর মাকেও জানানোর। ছেলেটা তো লজ্জায় ওর এই ভয় এর কথাটা মাকে বলতে পারে না। আমাকেও বলত না। কিন্তু আমি জানি, আমারই ছেলে তো। অথচ ওর মা আজকাল আমাকে এড়িয়ে চলে একেবারেই। অফিস থেকে ফিরে যখন ক্লান্ত হয়ে শুয়ে থাকে বালিশে মুখ গুঁজে, পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। জিজ্ঞাসা করি, 'অনি কেমন আছে খোঁজ নিয়েছ?' আমার মনে হয় ছেলেটা রাত্রে একলা ঘুমোতে পারছে না অনেকদিন হল। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
"কিন্তু আমাকে এসব বলছেন কেন? আপনার ছেলে মাঝরাতে উঠে বালিশের পাশে বসে থাকা অশরীরী উপস্থিতি অনুভব করে মন খারাপের রাতে। সে তো বুঝলাম। এতে আমি এই বয়সে আর এ হেন অবস্থায় ওর কি উপকারটা করব?"
না, আপনি কিছুদিন আগে পর্যন্তও এই ধরনের অবসাদের রুগীদের ভগবান ছিলেন। আমাকেও তো কতবার ফিরিয়ে এনেছেন নিশ্চিত হারের দোর গোড়া থেকে।
"ভুলে যাচছেন আমি রোগীর চিকিৎসা করতাম। আজকের মতো রোগের মুখোমুখি বসতাম না। অনেকদিন তো হল আমাদের ঐ জগৎ ছেড়ে আসা। আমার বয়স আর আপনার অবসাদ তো আমাদের পৃথিবীবাস সংক্ষিপ্ত করেই ফেলেছে। রাত্রেবেলা ওর মন খারাপ হলে পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত বোলান ছেড়ে দিন না। মন খারাপ লড়তে শিখে যাবে ও, লড়াকু মায়ের ছেলে কিনা, মৃত বাবার অশরীরী ছোঁয়া কিন্তু ভুলতে পারবে না, সারা জীবন আলো জ্বেলেই ঘুমোবে, বা জাগবে!"
No comments:
Post a Comment