2012 সালে সাইট এন্ড সাউন্ড পত্রিকা দুনিয়াভর এর স্বনামধন্য চিত্রপরিচালকদের নিয়ে বিশ্বের সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র বিষয়ে একটি সমীক্ষা করে। প্রথম স্থানে উঠে আসে একটি জাপানি সিনেমা যা প্রথম স্থানের দৌড়ে একেবারেই ছিল না। এমনকি একই সার্ভেতে ক্রিটিক্স বিভাগেও সেই একই সিনেমা, যার নাম 'টোকিও স্টোরি', তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
ছবির সময়:1953
পরিচালক: ইয়াসুজিরো ওজু
এক বৃদ্ধ দম্পতি যাঁরা তার ছোট মেয়ের সাথে মফস্বলে থাকেন, তারা দেখা করতে আসেন তার ছেলে মেয়েদের সাথে প্রথমবার যুদ্ধোত্তর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এর পদধ্বনি ওয়ালা টোকিও শহরে। ছোটখাটো ডাক্তার বড় ছেলে, বিউটি পার্লার চালানো বড় মেয়ের সাথে থাকার সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে শিগগিরই, যদিও তাতে তাদের স্ত্রী বা স্বামীর ভূমিকা কখনোই প্রধান হয় না। মেজ ছেলের বিধবা স্ত্রী একমাত্র ভরসা হয় অচেনা শহরে। বুড়ো এক রাত্রে কিছু পুরোনো টোকিওপ্রবাসী বন্ধুদের সাথে পানভোজন এর আধিক্যে করেন আত্মসমীক্ষন ও খানিকটা সমাজ এর মূল কাঠামোর বদলের পর্যালোচনা। ফিরে আসার পথে ওসাকা তে রেলচাকুরে ছোট ছেলেও খুব একটা আশা জাগায় না। বুড়ো বুড়ি ফিরে আসেন নিজের জায়গায়। বুড়ি মারা যান। ছেলে-মেয়েরা ব্যস্ত সময় থেকে একচিলতে সময় বার করে দায়িত্ব পালন করতে আসে। ফিরেও যায়। বুড়ো আর বিধবা বৌমা, বিধবা বৌমা ও ছোট মেয়ের কিছু সংলাপে ধরা থাকে আধুনিক সভ্যতা ও পরিবারের মধ্যের টানাপোড়েন গুলো।
বিয়ে না করে সারা জীবন মায়ের সাথে কাটানো পরিচালক (সূত্র: আই এম ডি বি) তার স্বভাববসতই হেলে থাকেন পুরনো পারিবারিক মূল্যবোধের দিকে, কিন্তু কখনই তিক্ততা আনেন না, বরঞ্চ বার বার জোর দেন আত্মসমীক্ষন বা বদলের অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে। স্থির, মাটি থেকে তিন হাত মাত্র ওপরের ক্যামেরায় নেয়া অধিকাংশ শট ছবিকে একটা সিগনেচার স্থিরতা আর গ্রাউন্ড রিয়ালিটিসংলগ্নতা দেয়। গোটা ছবি প্রশ্ন করতে থাকে বারবার একটা ধারণাকে, 'এ চাইল্ড কান্ট সার্ভ হিজ পেরেন্টস আফটার গ্রেভ'। উত্তরও আসে, তবে তা সাদা বা কালো হয় না, ধূসর এই ছবির আত্মা। মিনিমালিস্টিক, জাপানি কালচারের মতই এ ছবির বক্তব্য।
আই এম ডি বি ট্রিভিয়া বলছে, সত্যজিৎ রায় ছবিটি দেখতে দেখতে শেষের দিকে একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েন। কতটা ঠিক জানা নেই, কারন, সত্যজিৎ বাবু নিজে অপরাজিত করার ভাবনা শুরু করেন মা মারা যাবার পর অপুর মনের চাপা খুশির বৈপরীত্বে ইন্টারেস্টেড হয়ে ('মাই ইয়ার্স উইথ অপু')। কিন্তু মনে হল টোকিও স্টোরি ছবির আত্মা জাপানি ছবি ভক্ত পরিচালকের 'শাখা প্রশাখা'তে ফিরে এসেছে একটু হলেও।
বুড়ি টোমির সাথে ছোট নাতির ঘাসের উপর খেলা, বিধবা মেজ বৌ এর তিক্ত দাম্পত্য স্মৃতি ও নতুন দুনিয়ার হাতছানি উপেক্ষা করে অভ্যাস এর গোলামী, সমুদ্রতীরে সৈকতাবাসে বুড়ো বুড়ির আত্মসমীক্ষন, বুড়ির মৃত্যূর পর ছেলেমেয়েদের ও বাবার মুখোমুখি সংলাপ, ছবির শেষ হওয়ার পরেও সামনে ভাসতে পারে।
কখনো সময় হলে, যা এই ছবির মধ্যবয়সী পাত্রপাত্রী বা আমাদের একেবারেই হয় না ঝুটো এবং ঠুনকো প্রায়রিটির জন্য, দেখে নেয়া যেতেই পারে।
No comments:
Post a Comment