ডালহৌসির এই বারটা বেশ আঁধারে, জানলা দিয়ে ভিক্টরিয়া যুগের বাস্তুগুলো গিলে ধরতে আসে।
মালিক সুরাবর্দী শেখ পার্ক সার্কাসের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ করা হাজী, বাবা হাইকোর্ট এর মস্ত উকিল ছিলেন, মদ ছোঁন না, মদের টাকা ক্যাশিয়ারবাবু ব্যাংকে ফেলে শুধু পাসবই গুলো মালিককে দেন। তবে কাস্টমারদের ভালোবাসেন শেখ সাব। প্রায় সবাইকে নামে চেনেন।
এই যেমন পাঁচ নাম্বারের বোসবাবু। মারওয়াড়ির গদিতে খাতা লেখেন, বউ এর হাতে মার খান আর ওল্ড মঁক রাম খান। পয়সা শেষ হয়ে এলেই ধার শুরু। আজকাল আর কেউ ধার দেয় ও না।
তিন নম্বর পেগ টা শেষ করে ক্যাশে চার নম্বরটা অর্ডার করতে গিয়ে বোসবাবু বুঝলেন পকেটে কেবল একটা দশটাকার নোট।
আশেপাশে তাকিয়ে নতুন কাউকে দেখলেন না যে তাকে একবারের জন্য বিশ্বাস করবে আর ধার দেবে। সুরাবর্দী সাহেবকে বলে দেখবেন? রাশভারী লোক বলে কথা বলা হয় না। ওয়েটার নঈম মিয়াঁ বলে খাসা লোক। এগিয়ে যান বোসবাবু।
সূরা সাহেব বোসবাবুর উঠে আসা দেখে প্রমাদ গনেন। আব্বা বলতেন মুখের ওপর 'না' বলা ইবলিশের কাজ। সেই থেকে বিনা পয়সায় মামলা লড়তে লড়তে প্রায় পথে বসেছিলেন। সূরা সাহেব ওকালতি পড়েও এই জাহান্নুমের লাইনে এসেছেন না বলতে পারবেন না বলে।
বোসবাবুর মিনমিন শব্দে চটকা ভাঙল সূরা সাহেবের। "একটা পেগ যদি ধারে দিতেন, আর একটা মাছ ভাজা, গোপাল বলল কোলাঘাট থেকে তাজা রুই এসেছে সকালে"।
চোখের দিকে চাইলেন না সূরা সাহেব। ফাঁদে পড়ে যাবেন। বৌ এর হাতে মার খাওয়া বাঙালি বাবুদের চোখ খুব মায়াবী আর দুঃখী।
পশ্চিমের জানালার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "ওটা কি জানেন?"
বোসবাবু কিছুটা থতমত হয়ে বললেন "রিজার্ভ ব্যাংক ... তাই তো?"।
সূরা সাহেব বললেন "এক্সক্লুসিভিটি চুক্তি আছে"!!
বোসবাবু আরো ভেবড়ে গিয়ে বললেন "এক্সকুসি ... ইয়ে ... মানে ... কি?"
সূরা সাহেব বললেন "ওরা মদ বেচে না, আর আমি ধার দিই না"!!!
No comments:
Post a Comment