Saturday, August 29, 2020

মারিও দি আন্দ্রেদ এর কবিতা

(সকালবেলায় প্রিয় চিত্রপরিচালক অতনু ঘোষ এর ফেসবুক দেওয়ালে মারিও দি আন্দ্রেদ নামে এক ব্রাজিলিয়ান কবি'র লেখা এই কবিতাটা দেখেছিলাম। এটা তার অক্ষম গদ্য ভাবানুবাদ)

~

বছর ঘুরতে ঘুরতে যখন হিসেব কষতে বসলাম
আর দেখলাম বেঁচে থাকার জন্য সামান্য কিছু সময়ই হাতে আছে
অন্ততঃ যে সময় পেছনে পেছনে ফেলে এসেছি তার সাথে তুলনা করলে।

নিজেকে সেই ছেলেটার মত লাগলো যে একটা চকলেটের বাক্স হাতে পেয়েছিলো
শুরুতে সে সেগুলো একটার পর একটা মুখে ভরছিলো খুশিতে
তারপর যখন তার খেয়াল গেলো শেষ হয়ে আসা বাক্সটার দিকে
তখন সে তাড়াহুড়ো ভুলে একটা একটা'র স্বাদ তারিয়ে তারিয়ে নিতে শুরু করল।

এই মুহূর্তে অনিচ্ছায় সময় দিতে হচ্ছে অগণিত মেলামেশাকে, 
যেখানে কেবল নিয়ম, পদ্ধতি, আইন-ই আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে
কোনো কিছুই বাস্তবে পাওয়া যাবে না তা জেনেও।

ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছি সেই মানুষগুলোর জন্য
যারা তাদের বয়সের সাথে সমানুপাতে বেড়ে ওঠে নি।

আমার সময় খুবই অল্প
তাই খুব কম সময়ে পেতে চাইছি জীবনের সারবস্তুগুলোকে
আমার বাক্সে আর সামান্য কটা চকলেট পড়ে আছে।

এইসময় সেই লোকগুলোকেই পাশে পেতে ইচ্ছা করে
যারা তাদের ভুলগুলোকে অট্টহাস্যে জোর গলায় স্বীকার করে নিতে পারে
যারা তাদের কৃতিত্বের হাওয়ায় ফুলে ফেঁপে ওঠে না
যারা তাদের প্রত্যেকটা কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়
অর্থাৎ যে সমস্ত লোকেরা সভ্যসমাজ এবং তার অস্তিত্ব সত্য ও সততার সাথে আজও বজায় রেখেছে।

কেবলমাত্র অত্যাবশ্যক জিনিসই জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে
কাজেই আমি শুধুমাত্র তাদের সাথেই বাকি সময়টা কাটাতে চাই
যারা তাদের সুন্দর হৃদয় দিয়ে তাদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারবে যারা অপেক্ষাকৃত কঠোর জীবনপর্বে বেড়ে উঠেছে।

হ্যাঁ, আমি খুব তাড়াহুড়োয় আছি
আমি তাড়াহুড়োয় আছি জীবনকে সেই গভীরতায় বাঁচবার জন্য যা কেবলমাত্র এই অভিজ্ঞ বয়স আমাকে দিতে পারে
আমার চকলেটের বাক্সের শেষ কয়েকটা চকলেটকে আমি হেলাফেলায় শেষ করতে চাই না।

এই শেষ চকলেটগুলোর স্বাদ হবে অবর্ণনীয়
যেগুলো শেষ করে ফেলেছি তার থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয়
আমি আমার শেষের সময়ে একটা পরিষ্কার বিবেকের সাথে শান্তি আর পরিতুষ্টি নিয়ে পৌঁছাতে চাই।

আমাদের দুটো জীবন
আর দ্বিতীয়টা ঠিক তখন শুরু হয় যেদিন আমরা জানতে পারি আসলে জীবন একটাই।

Friday, August 28, 2020

সব ইয়াদ রাখখা জায়গা / আমির আজিজ

(অক্ষম ভাবানুবাদ, পৃথিবীর সমস্ত ফ্যাসিস্ট শাসকদের জন্য)

~

তুমি যখন বলবে রাত, আমি লিখবো চাঁদ
তুমি কারাপ্রাচীরের মধ্যে ঠেলবে, 
আমি তার কাঁটাতারওয়ালা দেওয়ালে বিচার লিখবো
তোমার সাজানো এফ আই আর এর জবাবে, আমি গাইবো 'আমরা করবো জয়'
তুমি খুন করবে আর আমি তার প্রমাণ লিখে যাবো দেওয়ালে দেওয়ালে।

তুমি আদালতকে বন্ধু বানিয়ে হাসিঠাট্টা করবে আমাকে নিয়ে
আমরা পথে ঘাটে দেওয়ালে বিধাতার রায় লিখবো
বধিরের কানে পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত ইনসাফ এর আওয়াজ তুলবো।

আমাদের লেখায় সত্যের ছটা অন্ধের চোখেও আলো এনে দেবে
তোমার কালো পদ্মের জবাবে আমরা লাল গোলাপ ফোটাবো
তুমি যতই আমার জমিতে অত্যাচার এর ফসল বুনবে
আমার আকাশ আমরা বিপ্লব এর কবিতায় ভরে দেব।

সব মনে রাখবো আমরা, সমস্ত কিছু মনে রাখবো আমরা
তোমাদের লাঠির আঘাতে বা বন্দুকের নলে
আমাদের যে বন্ধুরা চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে
তাদের স্মৃতি আমাদের ভাঙা হৃদয় এ যত্নে রেখে দেব আমরা।

সব মনে রাখবো আমরা, সমস্ত কিছু মনে রাখবো আমরা
তোমরা যখন ছাপার কালিতে মিথ্যের ইতিহাস লিখবে
আমরা তখন আমাদের রক্তের লেখায় ভবিষ্যৎকে একদিন সত্যি শোনাবার জন্য তৈরি হব।

সব মনে রাখবো আমরা, সমস্ত কিছু মনে রাখবো আমরা।

আমাদের মোবাইল টেলিফোন ইন্টারনেট বন্ধ করে
অন্ধকার সময়ে সারা শহরকে নজরবন্দি করে
আমার ছোট্ট ঘরে মারণ হাতিয়ার নিয়ে ঢুকে আসবে যখন আমার জীবনকে শেষ করতে
আমার সন্তানকে ঘিরে মাঝরাস্তায় মারণলীলা চালিয়ে
যখন মুচকি হেসে তুমি আমায় উদ্ধার করতে হাত বাড়িয়ে দেবে
তখন সব মনে রাখবো আমরা, সমস্ত কিছু মনে রাখবো আমরা।

দিনের বেলা যখন মিষ্টি কথায় আমাদের ভোলাবে
যখন ঝুটো বাগ্মিতার জাদুতে বোঝাবে সবকিছু ঠিক চলছে
অথচ রাতের অন্ধকারে প্রতিবাদীর গায়ে তুলবে লাঠি
আমার ওপর গুলি চালিয়ে আমাকেই বানাবে সন্ত্রাসবাদী
তখন সব মনে রাখবো আমরা, সমস্ত কিছু মনে রাখবো আমরা।

আমার অস্থিমজ্জায় লিখে রাখবো আমি এই হানাদারির কাহিনী
যখন তুমি আমার পরিচয় এর নথি চাইবে
আমি আমার অস্তিত্বর প্রমাণ অবশ্যই রেখে যাব
এই যুদ্ধ চলবে আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত্য
সমস্ত কিছু মনে রাখবো আমরা।

একথাও মনে রাখা হবে কেমনভাবে তুমি ভাঙতে চেয়েছিলে আমার প্রাণাধিক প্রিয় দেশ
আমাদের দেশকে জুড়ে রাখবার লড়াই মনে রাখবো আমরা
যখনই কাপুরুষতার প্রসঙ্গ উঠবে ভবিষ্যতে, তোমাদের উদাহরণ মনে রাখবো আমরা।

আর যখনই কথা উঠবে জীবনের
আমাদের নাম উচ্চারিত হবে চিরদিন
যাদের মজবুত মনকে বিভেদের হাতুড়ি দিয়েও ভাঙা যায় নি
যাদের বিবেককে তোমাদের মতো পয়সা দিয়েও কেনা যায় নি।

কিছু লোক যারা ঝড়ের মুখেও মাথা নোয়ায় নি
কিছু লোক যারা মারা যাওয়া পর্যন্ত জীবন্মৃতের পর্যায়ে গণ্য হয়নি।

তোমার চোখ হয়তো পলক ফেলতে ভুলতে পারে
পৃথিবীও হঠাৎ আহ্নিকগতি ভুলে দাঁড়িয়ে পড়তে পারে তার অক্ষে
কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেবার এই প্রচেষ্টা
আমাদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর-কে দাবিয়ে রাখবার এই ষড়যন্ত্র
সমস্ত কিছু মনে রাখবো আমরা।

তুমি যখন বলবে রাত, আমি লিখবো চাঁদ
তুমি কারাপ্রাচীরের মধ্যে ঠেলবে, আমি তার কাঁটাতারওয়ালা দেওয়ালে বিচার লিখবো
তোমার সাজানো এফ আই আর এর জবাবে, আমি গাইবো 'আমরা করবো জয়'
তুমি খুন করবে আর আমি তার প্রমাণ লিখে যাবো দেওয়ালে দেওয়ালে।

তোমার আঘাতে মৃত্যুর পর আমার আত্মা লিখবে
তোমার হননের সমস্ত প্রমাণ লিখবে
তুমি আদালতকে বন্ধু বানিয়ে হাসিঠাট্টা করবে আমাকে নিয়ে
আমরা পথে ঘাটে দেওয়ালে বিধাতার রায় লিখবো
বধিরের কানে পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত ইনসাফ এর আওয়াজ তুলবো।

তোমার কালো পদ্মের জবাবে আমরা লাল গোলাপ ফোটাবো
তুমি যতই আমার জমিতে অত্যাচার এর গদ্য লিখবে
আমরা আকাশ বিপলব এর কবিতায় ভরে দেব
আমাদের লেখায় সত্যের ছটা অন্ধের চোখেও আলো এনে দেবে।

যাতে তোমাদের নামে ঘৃণার নামকরণ হয় ভবিষ্যতে
যাতে তোমাদের নামে কালো কালিতে লেখা হয় ইতিহাস
তোমাদের নাম, তোমাদের কীর্তি, কিছুই ভোলা হবে না
সমস্ত কিছু মনে রাখা হবে।

😶